কতার বিশ্বকাপ থেকে মেসিদের কত টাকা আয় হলো (কেস স্টাডি)
ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২ এর খরচ $২২০ বিলিয়ন ডলারের বিশ্বকাপ প্রাইজ মানি $৪৪০ মিলিয়ন ডলার।এই বিশ্বকাপ থেকে মেসিদের কত টাকা আয় হলো? চার বছরে চক্র শেষ করে চলে এসেছিলো বিশ্বকাপ, ৩২ টা দলের লড়াই করে শিরোপা নিয়েছে একটা দল। কোন দল কত টাকা পেলো? সবরই উওর পাবেন এই আর্টিকেলে।
কাতার বিশ্বকাপ, আপনি কি জানেন এই বিশ্ব কাপ থেকে ফিফা কি রকম আয় করবে এবং যে ৩২ দল অংশগ্রহণ করবে তারাও কি পরিমাণে আয় করবে। এইবারের বিশ্বকাপ সব বিশ্বকাপ কে ছেড়ে গেছে। এই বিশ্বকাপের জন্য কাতার $২২০ বিলিয় ডলার খরচ করেছে, এটাকি আদৌও সম্ভব, এই টাকা কি কাতার আয় করতে পারবে এই বিশ্বকাপ থেকে। এই আর্টিকেলটি আপনাকে সব কিছু জানতে সাহায্য করবে, ফিফার আয়, কাতারের আয় ব্যায় সব কিছু নিয়ে এই নিবন্ধন।
অনেকে মনে করে থাকেন, খেলাতে কোন বিনোদন নেই, ক্রিকেট একটা খেলা তেমন ফুটবল ও একটি খেলা এই খেলা নিয়ে এ-তো মাতামাতির কি বা আছে। ফুটবল বর্তমান সময়ের একটা রাজনৈতিক খেলা এই ফুটবল বিশ্বকাপ কে সামনে রেখে অনেক ভূরাজনৈতিক গেইম খেলে থাকে রাজনৈতিক নেতারা। ফুটবল খেলা আসলে আমাদের একটা অতিরিক্ত মাতামাতি চলে আসে, Brazil and Argentina কে নিয়ে।
ফিফার প্রাইজ মানি (২০০২ থেকে ২০২২)
২০০২ সাল থেকে ফিফার প্রাইজ মানি টা মোটামুটি আকারে বাড়িয়ে চলেছে, ২০০২ সালে ফিফার প্রাইজ মানি ছিলো, $১৫৪ মিলিয়ন ডলার এই ডলার গুলো বিশ্বকাপের জন্য বরাদ্দ ছিলো। $১৫৪ মিলিয়ন ডলার থেকে সব খরচ ফিফা দেয়, Champions দলের, রানারআপ দলের ও প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়া সব দলকে ভাগ করে দেয়। ২০০২ সালে FIFA বিশ্বকাপ হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে ছিলো দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান তারা এই ওয়াল্ড কাপের জন্য টুটাল খরচ করেছে $৭ বিলিয়ন ডলার।
২০০৬ সালে এসে এই প্রাইজ মানি টা আরও ভেড়ে গেছে প্রাই ৭০ শতাংশ মতো অর্থাৎ এই টাকার অংক বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৬২ মিলিয়ন ডলার।২০০৬ সালে বিশ্বকাপ হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে ছিলো জার্মানি তারা $৪.৬ বিলিয়ন ডলার মতো খরচ করেছে।১২ টা স্টেডিয়ামে খেলা অনুষ্ঠিত হয় এবং ফ্রান্স এই ওয়াল্ড কাপ টি জিতে যায়।
২০১০ সালে ৬১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০২ সালে বিগ বাজেটে ওয়াল্ড কাপ আয়োজন করেছিলো দক্ষন কোরিয়া এবং জাপান। এর পর দুই আসরে এই বাজেট কমে যায় আয়োজক দেশের।
২০১৪ সালে বিশ্বকাপ আয়োজক ছিলো ব্রাজিল এই বারে অতীতের সব রেকর্ড কে ভেঙে যায় ব্রাজিল প্রায় $১৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করে বিশ্বকাপের জন্য, অবশ্য এতো টাকা খরচ করে কোন সুফল হয়নি ব্রাজিলের। ব্রাজিল হোস্ট করো ঘরে তুলতে পারে নাই শিরোপা। বরং বিশ্বকাপের বদলে তারা ৭ আপ ঘরে তুলে ছিলো (ফান ফেক্ট) ২০১৪ সালে Argentina ফাইনাল খেলেছে জার্মানির সাথে। আর এই বরাদ্দকৃত টাকার মাঝে অন্তর্ভুক্ত প্রাইজ মানি, দেশ গুলোর বিশ্বকাপ খেলার খরচ, প্লেয়ারদের ইনস্যুরেন্স, ক্লাব প্রোটেকশন মানি। গত বিশ্বকাপ অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১৪ তে এই টাকার পরিমাণ ছিল ৫৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০১৮ বিশ্বকাপ এই বিশ্বকাপ আয়োজন করে রাশিয়া। এই বিশ্বকাপে বাজেট তেমন ছিলো না $১১.৬ বিলিয়ন ডলার মতো।এই বিশ্বকাপ ফাইনাল জয় লাভ করে ফ্রান্স। ২০১৮ তে ফিফা এই টাকার পরিমাণ বাড়িয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ আর এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটাতে সব আছে, প্লেয়ারর খরচ, টিমের খরচ ইত্যাদি।
একটু ভেবে দেখুন ফিফা প্রতিনিয়ত কি পরিমান টাকা খরচ করতেছে। আপনাদের একটা আইডিয়া হয়েগেছে ২০২২ সালে এসে এই টাকার পরিমাণ বেড়ে কত ডলার হবে। এসব পুরস্কারের মূল্যও যে কোটি কোটি টাকা। যেমন যিনি গোল্ডেন বল পাবেন তিনি আসলে কত টাকার সমমানের পুরস্কার পাবেন? আবার যিনি গোল্ডেন বুট অর্জন করে তিনিই বা কত পাবেন? বলে রাখা ভালো ফিফা নিজেই আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে দিছে কোন দল কত টাকা পাবে। ফিফা তার ওয়েবসাইট আগে থেকে প্রকাশ করে রেখেছে।
২০১৭ সালে ঘোষণা অনুযায়ী ফিফা প্রত্যেক অংশগ্রহণ কারি দলকে একটা এমাউন্টও দিবে বলে ঘোষণা দেয়।
কাতার বিশ্বকাপ অংশগ্রহণ কারি দল কত টাকা পাবে?
এবারের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দল পাবে কমপক্ষে $২.৫ মিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় হিসাব করলে দাঁড়ায় এক ডলারে $১=৳১১০-৳১২০ টাকা করে। আর যদি কোন দল সেরা ১৬ তে জায়গা করে নিতে পারে তাহলে তাদের টাকার আয়ের পরিমাণ আরও বেশি হবে।
যে দল সেরা ১৬ তে জায়গা করে নিবে তারা পাবে আরও ৮ মিলিয়ন ডলার করে। যারা সেরা ১৬ পেরিয়ে সুপার ৮ আসবে তারা পাবে আরো $১২ মিলিয়ন ডলার করে। সুপার ৮ থেকে সেমি ফাইনালে যারা আসবে তারা পাবে $১৬ মিলিয়ন ডলার করে, সুপার ৪ থেকে যে দল ৪র্থ স্থান দখল করবে তারা পাবে $২২ মিলিয়ন ডলার ২০২২ বিশ্বকাপে মরক্কো ৪র্থ স্থান দখল করেছে।আফ্রিকা মহাদেশ এই প্রথম কোন দল বিশ্বকাপ মঞ্চে এতো বড় সফলতা অর্জন করেছে। যে দল ৩য় স্থান দখল করবে সে দল পাবে,$২৬ মিলিয়ন ডলার। এই বিশ্বকাপ ৩য় স্থান দখল কারি দেশ হিসেবে ক্রোশিয়া স্থান করে নিয়েছে,২০১৮ সালে ক্রোশিয়া রানারআপ হয়েছিল।
এবার বাকি আছে রানারআপ এবং ফাইনালিস্ট। রানারআপ যারা হবে তারা পাবে $৩২ মিলিয়ন ডলার ২০২২ সালে রানারআপ হয়েছে, ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জয়ী দল ফ্রান্স। এবার বাকি থাকে ফাইনালিস্ট যারা হবে তারা পাবে সবচেয়ে বেশি $৪৫ মিলিয়ন ডলার এই বিশ্বকাপ জিতেছে মেসির আর্জেন্টিনা। মেসির আর্জেন্টিনা ২০১৪ সালো ফাইনাল খেলেছে এবং জার্মানির কাছে হেরেছে। ফিফা $৪৪০ মিলিয়ন ডলার সব দলকে দিবে। $২২০ বিলিয়ন ডলারের বিশ্বকাপ প্রাইজ মানি $৪৪০ মিলিয়ন ডলার। এটা ভাবতে ও অবাক লাগে কাতার এই বিশ্বকাপ এতো টাকা খরচ করেও প্রাইজ মানি টা আরও বেশি হওয়ার কথা না। আসলে এই রকম না, এটা তো একটা রাজনৈতিক খেলা।
ফিফা কি আসলেই $৪৪০ মিলিয়ন ডলারে প্রাইজ মানি দিয়েছে?
হা! $৪৪০ মিলিয়ন ডলার ৩২ টা দলকে দিবে। যে দল লেবেল আপ করতে পারবে প্রাইজ মানি টা আরও হায় হবে। সত্যি বলতে $১ বিলিয়ন ডলার অনুদান দিবে ফিফা।এটাকে ৪ ভাগে ভাগ করে দিবে।
১। বিশ্বকাপ প্রাইজ মানি ($৪৪০ মিলিয়ন) ডলার
২। Preparation Payment ($70 মিলিয়ন) ডলার
৩। Club Benefit Program ($310 মিলিয়ন) ডলার
৪। Club Protection and Insurance Fee ($220 মিলিয়ন) ডলার
এই ৪ ভাগে ভাগ করে দিবে ফিফা, টাকা গুলো কে।
ফিফা আয়ের উৎস কোথায় থেকে?
ফিফা কয়েক ভাবে আয় করে থাকে, তাঁর মধ্যে উল্লেখ্য হলোঃ
১। মিডিয়া স্বত্ব ( টেলিভিশন রাইটস)
২। মার্কেটিং রাইটস ( স্পন্সর)
৩। টিকিট বিক্রি এবং হসপিটালিটি
৪। ব্র্যান্ডিং এবং লাইসেন্সিং
মিডিয়া স্বত্ব কি? সোজা কথায় আমরা টেলিভিশন খেলা দেখে থাকি। এইটা যে টেলিভিশন দেখাবে তারা ফিফাকে একটা টাকা দিয়ে মিডিয়া স্বত্ব ক্রয় করে থাকে। এইবারের মিডিয়া স্বত্ব ক্রয় করেছে T Sports,ফিফার এই ওয়াল্ড কাপ থেকে আয় হওয়ার সম্ভবনা $৪.৭ বিলিয়ন ডলার। মিডিয়া স্বত্ব বিক্রি হয়েছে $২.৬৪ বিলিয়ন ডলার মার্কেটিং রাইটস বিক্রি হয়েছে $১.৩৫ বিলিয়ন ডলার এর মতো।
স্টেডিয়ামে এর টিকিট এবং হসপিটালিটি থেকে আয় হবে $৫০০ মিলিয়ন ডলার মতো। $২২০ বিলিয়ন ডলারের ওয়াল্ড কাপ আয় হবে $৪.৭ বিলিয়ন ডলার। এটা কি একটা লস ওয়াল্ড কাপ না। কেন $২২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে কাতার, এটা নিয়ে পরবর্তী একটা কেস স্টাডি করবো আমরা।
আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন, এই কেস স্টাডি টা কেমন লেগেছে কমেন্টে করে জানাতে ভুলবেন না।পরবতী কি নিয়ে কেস স্টাডি চান সেটাও জানাতে পারেন আমাদের কে।