গোয়েন্দা উপন্যাস

গোয়েন্দা উপন্যাস | বাংলা সাহিত্যের সেরা গোয়েন্দা গল্প | MsterBlog.com

বাংলা সাহিত্যে অনেক গোয়েন্দা চরিত্র রয়েছে যারা রহস্য সমাধানের পাশাপাশি জয় করে নিয়েছে পাঠকের মনও, যার চর্চা হয়/হচ্ছে মানুষের মুখে মুখে , রবীন্দ্রনাথের আমল থেকে এখন পর্যন্ত যে সব এখনও বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য বেস্ট সেলার বইয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে। তেমনই কিছু বই নিয়ে আজকের লেখা।নীচের বইগুলোতে আমি নিরপেক্ষ বর্ণনা দিতে চেষ্টা করেছি, তাই ভালোদিক গুলোর পাশাপাশি বই গুলোর দুর্বলতা নিয়ে লিখেছি।

বাংলা সাহিত্যের হাত ধরে অসংখ্য গোয়েন্দা চরিত্রের সৃষ্টি হয়েছে ,কিছু কিছু লেখা হয়েছে চরম বিখ্যাত আবার কিছু কিছু গোয়েন্দা উপন্যাস তেমন জনপ্রিয়তা পায় নি । গোয়ান্দা উপন্যাস এমন একটি জনরা যেই জনরার বই কম বেশি সকল পাঠকই কোন না কোন দিন পড়েছেন ।বিশেষ করে কিশোর বয়সে কোন না কোন গোয়েন্দা চরিত্রের ভক্ত ছিলেন না এমন লোক পাওয়া দুস্কর। তাই মিলিয়ে দেখুন আপনি কোন চরিত্রের আপনি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন আর গোয়েন্দা উপন্যাস পড়তে ভালো লাগলে পড়ে ফেলুন না পড়া বই গুলো ।

মোট বইয়ের সংখ্যাঃ ৩৫টি (১৭টি উপন্যাস,১৮টি গল্প ও ৪টি অসম্পূর্ণ গল্প- উপন্যাস)

মূল চরিত্রঃ প্রদোষ চন্দ্র মিত্র /ফেলু মিত্তির ওরফে ফেলুদা

কিছু উল্লেখযোগ্য বইঃ বাদশাহী আংটি, রয়েল বেঙ্গল রহস্য,গ্যাংটেকে গন্ডগোল,যত কান্ড কাঠমুন্ডুতে ।

বই নিয়ে কিছু কথাঃ

 

সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি গুলোর মধ্যে ফেলুদা চরিত্রটি হলো সবচেয়ে অনবদ্য , বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে তার সৃষ্ট এই চরিত্রটির লাখো মানুষকে আনন্দ দিয়েছে ,দিয়ে যাচ্ছে। ছোটদের জন্য লেখা হলেও এই বই জোয়ান থেকে বুড়ো সকলে গ্রোগাসে গিলেছে।

প্রত্যেক লেখকের নিজস্ব স্বকীয়তা থাকে। সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা গল্প গুলোর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো বইগুলোতে এডভেঞ্চারের পাশাপাশি রয়েছে ভারতবর্ষ ও ভারতবর্ষের বাইরের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরেরে নিখুত বর্ণনা যেন গোয়েন্দা উপন্যাসের সাথে ভ্রমণকাহিনীর কম্বো।ফেলুদার সাথী হয়ে আপনি ঘুরে আসতে পারবেন কলকাতা, দার্জিলিং, সিকিম, রাজস্থান, অজন্তা-ইলোরা-কৈলাশ থেকে কিংবা ভার তের বাইরে নেপাল, ইংল্যান্ড থেকে। বইয়ের চরিত্র গুলো হলঃ

ফেলুদা ওরফে প্রদোষ মিত্তির বয়স ২৭ বছর, যার মেধাশক্তি অসামান্য ,রয়েছে ফটোগ্রাফিক মেমোরি এবং প্রায় সববিষয়ে জ্ঞান।তিনি বাংলা ও ইংরেজি জানেন এবং নিজের ডাইরি লিখতে ব্যবহার করেন গ্রিক ভাষা।সাহসী,এডভেঞ্চার প্রিয় এবং অন্তর্মুখী । এমনকি তোপসে তার খুড়তুতো ভাই ,সঙ্গী এবং বর্ণনাকারী তার অভিপ্রায় সম্পর্কে কেস সমাধানের আগ পর্যন্ত তার চাল আন্দাজ করতে পারে না।

আরও দেখতে পারেন:

তোপশে বা তপেশ ১৫ বছরের কিশোর (প্রথম দিকের গল্পে ১৩ বছর ছিলো) যে কিনা ফেলুদার গল্প সমূহের বর্ণনাকারী এবং একনিষ্ঠ ভক্ত। বাস্তবে তোপসে এত সুন্দর ভাবে গল্পের বর্ণনা করে যে পাঠকের মনে হয় পাঠক যেন গল্পেরই একটা অংশ হয়ে গেছে এবং ঘটনা গুলো যেন নিজ চোখে দেখছে।

লালমোহন গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ু একজন রোমাঞ্চ উপন্যাস (ক্রাইম থ্রিলার) লেখক কিন্তু তার চরিত্র একজন রোমাঞ্চ উপন্যাস লেখক থেকে সম্পূর্ণ উল্টো। তার কার্যকলাপ ,কোন কিছু দেরিতে বুঝতে পারা বই পাঠকদের মুখে ফোটাবে এক চিলতে হাসি। তার চরিত্রটি গল্পগুলোতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা ।

সত্যজিৎ রায় ছিলেন একজন উঁচু মাপের গল্পকার | তার একটা বৈশিষ্ট্য হলো তিনি সবসময় তার পাঠকদের বুদ্ধিমান মনে করতেন | ফেলুদার কোনও অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী পড়ার সময় পাঠকেরা কখনই নিজেদের চালাক নয় বা বুদ্ধিহীন মনে করবে না | তার কারণ, গল্পগুলিতে লেখক কিছুক্ষণ পরপর বিভিন্ন ক্লু দিতেন।

এই ক্লু-গুলোই সাধারণত পাঠকদের সাহায্য করত ফেলুদার সাথে একজোট হয়ে রহস্য সমাধান করতে | কেবল একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লু উনি রেখে দিতেন গল্পের শেষের জন্য যা দিয়ে ঘটত গল্পের সমাপ্তি | এমনই অনবদ্য ছিল তাঁর বাহুল্যহীন জমজমাট ভঙ্গিমায় গল্প বলার কায়দা

বোমক্যেশ বক্সী
লেখকঃ শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

মোট বইয়ের সংখ্যাঃ ৩৩ টি

মূল চরিত্রঃ ব্যোমকেশ বক্সী

কিছু উল্লেখযোগ্য বইঃ চিড়িয়াখানা, বেনীসংহার, বহ্নিপতঙ্গ ,শজারুর কাঁটা ,সত্যান্বেষী, ইত্যাদি ।

বই নিয়ে কিছু কথাঃব্যোমক্যেশ হলো এমন এক চরিত্র যার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অসামান্য,বিশ্লেষণী দক্ষতা অনবদ্য,কথার মারপ্যাঁচে যিনি বের করে আনেন ভেতরের সত্য । একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ কিন্তু নিজেকে সত্যান্বেষী পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করেন, তার রোমাঞ্চকর কাহিনী গুলো উঠে এসেছে অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায় । যেমনটা শার্লকের কাহিনী গুলো আর্থার কোনান ডয়েল ওয়াটসন কে দিয়ে লিখিয়েছিলেন। তবে শেষের দিকের লেখা গুলোতে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় আর অজিতকে আনেন নি ।

অন্য গোয়েন্দারা যেখানে অপরাধী ধরতে তাদের মাথা খাটান সেখানে ব্যোমক্যেশ মাথা খাটান ঘটনা কি হয়েছিল, কেন হয়েছিল তা জানতে। তবে ব্যোমক্যেশের সাথে অন্যান্য সকল গোয়েন্দার মূল পার্থক্য হলো ব্যোমক্যেশ হলো সাংসারিক গোয়েন্দা ।তারই এক মক্কেল সত্যবতী কে বিয়ে করেন ব্যোমক্যেশ ।বেশিরভাগ গোয়েন্দাদের দেখা যায় সংসার সম্পর্কে তারা থাকে উদাসীন কিন্তু ব্যোমক্যেশ সম্পূর্ণ উল্টো । পুরোদস্তুর সংসারী এই সত্যান্বেষী , গোয়েন্দাগিরির পাশাপাশি সামলেছেন সংসারও। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় লেখায় ব্যোমক্যেশের রোমাঞ্চকর অভিজানের পাশাপাশি রয়েছে সত্যবতীর সাথে ব্যোমক্যেশের মজার খুনসুটির গল্প।

গল্পের পটভূমি সাজাতে লেখক ছাড় দেন নি এতটুকুও। মারদাঙ্গা ছাড়া শুধু মাথা খাটিয়ে কোথাও বিশ্বাসঘাতকতা, কোথাও পরকীয়া,পারিবারিক কোন্দল, প্রতিশোধ কিংবা সুচারু চক্রান্ত সকল রহস্য ভেদ করেছেন ব্যোমকেশ । প্রতিটি গল্পের চরিত্র গুলো লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন খুবই দক্ষ হাতে ,মনে হবে সবই যেন ঘটছে বাস্তবে । অতিরঞ্জিত না, সবকিছুরই ছিমছাম, তবে সূক্ষ্ম বর্ণনা দেওয়া । সাধারণ সব সামাজিক চরিত্র, তাদের রিপুমত্ত অপরাধের সব গল্প আর সেসব গল্পের অন্তরালের সব অপরাধ সমাধানের শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনীই হলো ব্যোমক্যেশের কাহিনী গুলো। আপনাদের আমন্ত্রণ রইলো মাথার কারসাজিতেই বাজিমাত করা সেই সব গল্পের জগত থেকে ঘুরে আসার জন্য ।

শবর দাশগুপ্ত
লেখকঃ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

মোট বইয়ের সংখ্যাঃ ২টি । (রহস্য সমগ্র নামের বইটিতে তিনি শবরের সকল কাহিনী একত্রে প্রকাশ করেন) এবং ২য় বইটি হলো তীরন্দাজ

মূল চরিত্রঃশবর দাশগুপ্ত

কিছু উল্লেখযোগ্য বইঃ রহস্য সমগ্র , তীরন্দাজ

 

বই নিয়ে কিছু কথাঃ বেশিরভাগ গোয়ান্দা চরিত্রের মাঝে যে জিনিষটি সবচেয়ে কমন তা হলো তারা বেসরকারী গোয়েন্দা তাদের নেশা হলো গোয়েন্দাগিরি কিন্তু পেশা নয়। কিন্তু শবর হলো কলকাতার লালবাজার অফিসের গোয়েন্দা কর্মকর্তা ।তার পেশা ও নেশা হলো গোয়েন্দাগিরি । শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এ ব্যাপারে বলেন প্রাইভেট ডিটেকটিভদের গোয়েন্দা কাহিনী পড়তে যতোই আকর্ষণীয় লাগুক, বাস্তবে একজন স্বাধীন বেসরকারী গোয়েন্দার পক্ষে তদন্ত করতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয় সবসময় তারা সঠিক ভাবে জেরা করারও সুযোগ পান না । তাই শীর্ষেন্দু বেছে নিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক গোয়েন্দাকে।

গোয়েন্দা শবর দাশগুপ্ত দেহের গড়ন মাঝারি ধরনের তবে প্রবল শক্তিশালী ও সাহসী । রয়েছে পুলিশের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, যেমন অস্ত্রচালনা বা নিরস্ত্র যুদ্ধের দক্ষতা । জেরা করাতে অত্যন্ত পটু কথার মার প্যাঁচে বের করে আনেন ক্লু। শবরের কাহিনী গুলোর প্লট মূলত সমাজের উচ্চবিত্তের মানুষদের ঘিরে। নেশা,নারী, আকর্ষণ ,পরকীয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কেস নিয়ে সাজানো হয়েছে গল্পগুলো ।তবে উপন্যাস গুলো বেশিরভাগ সংলাপ নির্ভর । ন্যারেটিভ বা বর্ণণামূলক নয় । অনেকটা নাটকীয় ধাঁচে লেখা। ঈগলের চোখ, ঋণ এই কাহিনীগুলো শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় লেখার পর যখন পাঠকমহলে খুবই জনপ্রিয় হয়ে যায় এরপরে তিনি নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। কাহিনীগুলো পরবর্তীতে রুপ দেওয়া হয়েছে সিনেমাতেও।

শবর নিয়ে নির্মিত সিনেমা
কিরীটী রায়
লেখকঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত

মোট বইয়ের সংখ্যাঃ ১৫টি অমনিবাস

মূল চরিত্রঃ কিরীটী রায়

কিছু উল্লেখযোগ্য বইঃ

বই নিয়ে কিছু কথাঃ যুক্তরাজ্যে নীহাররঞ্জন গুপ্তের সাথে বিখ্যাত গোয়েন্দাকাহিনি লেখক আগাথা ক্রিস্টির পরিচয় ঘটে। এরপরেই দেশে ফিরে তিনি নির্মাণ করেন এসে কিরীটী চরিত্র । তাই তার লেখাতে আগাথা ক্রিস্টির স্পষ্ট ছাপ লক্ষ্য করা যায়।

কিরীটী হলো সুদর্শন পুরুষ ,যার উচ্চতা ছফুট, ফর্সা ,কোকড়ানো চুল, চোখে থাকে পুরু লেন্সের চশমা। তার সহকারী হিসেবে থাকে তার বন্ধু সুব্রত। কিরীটীর যে গুণটি সবচেয়ে প্রখর তা হলো তার ‘ইন্সটিঙ্কট ‘ । কিরীটীর উপন্যাস গুলো মূলত সমাজের উচুশ্রেণীর মানুষদের নিয়ে। কিরীটী নিজেও চলে সাহেবদের মতো। তার বন্ধু সুব্রতকে নিয়ে সে বিভিন্ন অপরাধের সূত্র খুঁজে বেড়ায় । নিজেকে পরিচয় দেয় রহস্যভেদী হিসেবে। কিরীটির চরিত্রগুলো যেহেতু সমাজের উপরতলার মানুষদের তাই সাধারণ পাঠকদের গল্পের সাথে খাপ খাওয়াতে কিছুটা বেগ পেতে হয়।সেই সাথে বিশাল অংশজুড়ে কিরীটির ক্লু পাওয়ার মাধ্যম হলো আড়িপাতা। বার বার এক পন্থা হয়তো পাঠকদের কিছুটা বিরক্তের সৃষ্টি করতে পারে। তবে সব মিলিয়ে কিরীটীরও রয়েছে অনেক ফ্যান। অনেক পাঠকই তাদের পছন্দের গোয়েন্দয়ার স্থান দিয়েছে কিরীটীকে।

অর্জুন
লেখকঃ সমরেশ মজুমদার

মোট বইয়ের সংখ্যাঃ ৫১ টি (গল্প ও উপন্যাস মিলিয়ে)

মূল চরিত্রঃঅর্জুন

কিছু উল্লেখযোগ্য বইঃ খুনখারাপি , ম্যাকসাহেবের নাতনি , ড্রাকুলার সন্ধানে অর্জুন ইত্যাদি

মূল চরিত্র নিয়ে কিছু কথাঃঅর্জুনের বাড়ি ভারতের জলপাইগুড়ি শহরে। গোয়েন্দা অমল সোম হলো তার গুরু। অর্জুনের উপন্যাস গুলোয় অর্জুনের কোন সহকারী নেই সে নিজেই সমাধান করতে বেরিয়ে পড়ে, বেরিয়ে পরে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারে। অর্জুন নিজেকে পরিচয় দিতে পছন্দ করে সত্যসন্ধানী হিসেবে। সমরেশ মজুমদার অর্জুন চরিত্রটিকে কে খুব জিনিয়াস কিংবা খুবই চমৎকার বিশ্লেষণী ক্ষমতার অধিকারী এভাবে চরিত্রায়ন করেননি। একজন নতুন গোয়েন্দা যে তার বিভিন্ন অভিযান থেকে, তার অভিঙ্গতা থেকে শিখছে সেভাবে চিত্রায়ন করেছেন।

আস্তে আস্তে শেষের উপন্যাস গুলোতে অর্জুন কে আগের থেকে আরো বুদ্ধিমান,অভিঙ্গতা সম্পন্ন হিসেবে দেখিয়েছেন। অর্থাৎ লেখক character build-up (চরিত্র নির্মাণ) করেছেন খুব চমৎকার ভাবে ।

তিন গোয়েন্দা (মুসা,রবিন,কিশোর)
লেখকঃ রকিব হাসান , শামসুদ্দিন নওয়াব

মোট বইয়ের সংখ্যাঃ মোট কাহিনীর সংখ্যা ৪৫০ টি ( ১৬০+ লিখেছেন রকিব হাসান , বাকি গুলো শামসুদ্দিন নওয়াব ও বিভিন্ন গোস্ট রাইটার লিখেছেন )

মূল চরিত্রঃ মুসা আমান ,কিশোর পাশা, রবিন মিলফোর্ড

কিছু উল্লেখযোগ্য বইঃ কাকাতুয়া রহস্য ,জলদস্যুর দ্বীপ , ভীষন অরন্য ,অথৈ সাগর ,রুপালী মাকড়সা,ইন্দ্রজাল ইত্যাদি.

বই নিয়ে কিছু কথাঃ তিন গোয়েন্দা বই গুলো মৌলিক বই নয় বিভিন্ন বিদেশী গল্পের অবলম্বনে লেখা হয়েছে। তবে এই বই পাঠকমহলে ব্যাপক জনপ্রিয় ।বাংলাদেশে খুব কম পাঠকই আছে যারা তিন গোয়েন্দার সাথে পরিচিত না। কিশোর পাশা যে তিন গোয়েন্দার নেতা , আমেরিকার রকি বীচে যার বসবাস ,মুসা আমান আফ্রিকান বংশোদ্ভুত নিগ্রো ।ভোজন রসিক কিন্তু গায়ে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি । মাথা দিয়ে শত্রুর পেটে আঘাত করতে সিদ্ধহস্ত। ত্রি মূর্তীর তৃতীয়জন হলো রবিন মিলফোর্ড তিন গোয়েন্দার নথি গবেষক হিসেবে পরিচিত । আয়ারল্যান্ডের বংশোদ্ভূত। বই পড়তে ভালোবাসে ,তিন গোয়েন্দার সবার মধ্যে সবচেয়ে কেতাদুরস্ত আর দেখতেও সুন্দর।

এই তিন বন্ধু স্কুলের পাশাপাশি পার্ট টাইমে করে গোয়েন্দাগিরি ,তাদের হেডকোয়ার্টার হলো একটি পুরনো গ্যারেজের পেছনের মোবাইল হোমে। তিন বন্ধু মিলে রহস্যের টানে ছুটে বেড়ায় বিভিন্ন জায়গায় , ভয়ানক ভিলেনের সাথে লড়ে ফাস করে দেয় তাদের কান্ডকারখানা।

তিন গোয়েন্দা সিরিজের বই
পরাশর বর্মা
লেখকঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র

মোট কাহিনীর সংখ্যাঃ ৩৭টি (গল্প ও উপন্যাস মিলিয়ে )

মূল চরিত্রঃ পরাশর বর্মা

কিছু উল্লেখযোগ্য বইঃ বেইমান বাটকারা, দূরবিন চোখে পরাশর বর্মা ,গোয়েন্দা হলেন পরাশর বর্মা ইত্যাদি

মূল চরিত্র নিয়ে কিছু কথাঃ পরাশর একজন কবি সেই সাথে করেন গোয়েন্দাগিরিও ।তবে কবি হিসেবে তাকে ব্যর্থই বলা চলে ।তার বন্ধু সম্পাদক কৃত্তিবাস ভদ্র হলো পরাশরের কাহিনীগুলোর কথক ,তার বর্ণনাতেই মূলত আমরা কাহিনী সম্পর্কে জানবো।কৃত্তিবাস ভদ্রের মতে পরাশর বর্মার কবিতা অখাদ্যই নয় জঘন্য। কিন্তু পরাশর নিজেকে গোয়েন্দা নয় কবি হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি আনন্দ পায়।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদা চরিত্র যতটানা বিখ্যাত হয়েছে ততটা বিখ্যাত পরাশর হতে পারে নি । বই গুলোতে বইয়ের মাঝে পাঠকদের জন্য কোন ক্লু দেওয়া হয় নি একেবারে শেষ পর্যায় গিয়ে রহস্য সমাধানের পর সব কিছু বর্ণনা করা হয়েছে ।এই ধরনের লেখার কারনে অনেক পাঠকই বিরক্ত হন । কাব্যিক গোয়েন্দা এই কন্সেপ্টে লেখক কিছুটা নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছেন ।খানিকটা বৈচিত্র্যে ঠাসা, শার্লক হোমস স্টাইলের না হবার কারণে আলাদা আমেজ পাওয়া যায় তাই চাইলে পড়ে দেখতে পারেন বইটি।

মিতিন মাসি
লেখকঃ সুচিত্রা ভট্টাচার্য

বইয়ের সংখ্যাঃ ১৪ টি উপন্যাস

মূল চরিত্রঃ প্রজ্ঞাপারমিতা মুখার্জী

কিছু উল্লেখযোগ্য বইঃ সারাণ্ডায় শয়তান, জোনাথনের বাড়ির ভূত, মার্কুইস স্ট্রিটে মৃত্যুফাঁদ ইত্যাদি

মূল চরিত্র নিয়ে কিছু কথাঃ
বাংলা সাহিত্যে অনেক গোয়েন্দা চরিত্র থাকলেও মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র নিয়ে খুব একটা লেখা হয় নি। সুচিত্রা ভট্টাচার্য সেই চিরায়ত বলয় থেকে বেরিয়ে এসে সৃষ্টি করেছেন মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র মিতিন মাসি। মিতিন মাসি একজন বিবাহিত ঘর সংসারী নারী , কিন্তু তার পাশাপাশি চলে তার গোয়েন্দাগিরি। পুলিশের বিভিন্ন কর্তারাও মাঝে মাঝে চলে আসে মিতিনের কাছে পরামর্শ নিতে ।জানেন কারাতে, সঙ্গে রাখেন রিভলভার । স্বামী পার্থ, বোনঝি টুপুর রয়েছে প্বার্শ চরিত্র হিসেবে। অনেকটা ব্যমকেশ স্টাইলে লেখা হয়েছে উপন্যাস গুলো। সেই সাথে উপন্যাস গুলোতে কাহিনী গুলোও আগিয়েছে অনেক দ্রুত (fast moving)।

আরো কিছু বইঃ অসংখ্য গোয়েন্দা চরিত্র সৃষ্টি হয়েছে বাংলা সাহিত্যে। উপরে কিছু বিখ্যাত বইয়ের নাম লেখা হয়েছে । এছাড়াও উল্লেখ করার মত রয়েছে কাজী আনোয়ার হোসেনের কুয়াশা সিরিজ, নারায়ন সান্যাল এর শার্লক হেবো, ফরিদুর রেজা সাগরের ছোটকাকু , সমরেশ বসুর গোগোল ইত্যাদি।

পাদটীকাঃ অনেকেই মাসুদ রানাকে গোয়েন্দা গল্প বলে থাকে কিন্তূ মাসুদ রানা হলো স্পাই, এসপিওনাজ এজেন্ট তার কাজ গোয়েন্দাগিরি নয় বরং গুপ্তচর বৃত্তি কিংবা কোন মিশনে যাওয়া যেমন জেমস বন্ড করে থাকে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু ও টেনিদা মূলত গোয়েন্দা কাহিনী নয় বরং এডভেঞ্চার কাহিনী তাই এই লিস্টে তাকে রাখি নি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top