|

স্টিভ জবসঃ কলেজ ড্রপ আউট থেকে বিলিয়নিয়ার

আপেল একটা ফলের নাম আবার আপেল একটা মাল্টি বিলিয়ন ডলার কোম্পানি ও বটে। মোবাইল এর দুনিয়ায় সবার হাতে যে স্মার্ট ফোন আছে টা, কলেজ ড্রপ হওয়া একজন এর হাতে ধরে।

স্টিভ জবস , আমরা স্টিভ জবসের জীবনি নিয়ে বলবো না। আজকে আমরা আলোচনা করবো, কেন স্টিভ জবস কলেজ ড্রপ আউট হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা কেস স্টাডি করবো আপেল কোম্পানি নিয়ে।

বলে রাখা ভালো স্টিভ জবসের জন্মদাত্রী  মা কোন দিন কলেজ পাশ করতে পারে নাই, তার বাবা কোন স্কুল থেকে পাশ করতে পারে নাই। স্টিভ জবস যখন রিড কলেজে ভর্তি হয়, বেশি দিন টিকতে পারে নাই ৬ মাস পর রিড (Reed) কলেজ থেকে ড্রপ আউট হয়।

স্টিভ জবস ড্রপ আউট হয়েছে কেন?

অনেকের মনের ধারণা আছে, স্টিভ জবস আইফোন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার জন্য কলেজ ড্রপ আউট হয়েছে আসলে তা নই। তার পড়াশোনা খরচ জোগাড় করতে না পেরে কলেজ ড্রপআউট হয়। কলেজ থেকে ছিটকে পড়ার পরেও সে চাকরি জন্য চেষ্টা করে নাই বেকার ছিলো। বেকার থেকেই তৈরী করেন Apple এর মতো কোম্পানি।

রিড কলেজ
Credit: রিড কলেজ


স্টিভ জবস ড্রপ আউট হওয়ার পর ১৮ মাস বেকার ছিলেন। স্টিভ জবস সুনামধন্য এক কলেজে পড়াশোনা করতো , যে কলেজে পড়াশোনা করতো তার নাম হলো রিড কলেজ।কেন রিড  কলেজ থেকে ড্রপ আউট হয়েছে? কেউ বিশ্বাস করবে কলজের মাসিক ফ্রি দিতে না পারার জন্য। বাধ্য হয়ে কলেজ ড্রপ আউট করেছে।

স্টিভ জবস কলজে ড্রপ আউট হওয়ার পর কি হবে সেটা নিয়েও তার কোন ধারণা ছিলো না।তার ২ জন মা ছিলো, একজন জন্মদাতা মা, আরেকজন দত্তক নেওয়া মা। তার দত্তক নেওয়া মা ছিলো অবিবাহিত  স্মাতক এর ছাত্রী।

আরও পড়তে পারেন

হতাশা থেকে মুক্তির উপায়:নতুন ভাবে জীবন শুরু করার কৌশল

জীবন বদলে দেওয়ার মতো মোটিভেশনাল ছোট গল্প

৭ টি কমন সফল ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য

সফলতা কি? মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ভিতরে লুকিয়ে থাকে সফলতা

স্টিভ জবস কলেজ ড্রপ আউট কেন হয়?

 

ছোট বেলার কথা! এক অবিবাহিত ছাত্রী স্টিভ জবস কে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই, ওই অবিবাহিত স্নাতক ছাত্রী চেয়েছিলেন, সে স্নাতক শেষ করে স্টিভ জবস কে দত্তক নিবে।
স্টিভ জবস, তখন দুনিয়ায়তে ও আসে নাই, তার জন্মদাতা মা, বাবা তাঁকে দত্তক দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন, যে মহিলা টি দত্তক নিবেন সেও দত্তক নেওয়া জন্য, উকিল এর মাধ্যমে কাগজ পত্র তৈরী করে ফেলেন।

যে দিন স্টিভ জবস দুনিয়াতে আসে, তার জন্মদাতা মা, ওই মহিলাকে ফোন দেন, আমরা একটা পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছি আপনি কি এটা দত্তক নিবেন, ওই মহিলা টি সরাসরি বলে দেয়।

আমার একটা কন্যা সন্তান প্রয়োজন ছিলো, তাই স্টিভ জবস কে আর দত্তক নেন নাই।তার জন্মদাতা মা-বাবার সাথে স্টিভ জবস থেকে যায়। স্টিভ জবসের জন্ম দাতা মা বাবারা সিদ্ধান্ত নেন, তারা তার সন্তানকে কলেজে পড়াশোনা করাবেন।

“যখন আপনি উদ্ভাবন করবেন, তখন আপনার কিছু ভুলও হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি সেগুলো দ্রুত স্বীকার করে নেন, এবং সাথে সাথে আপনার অন্য উদ্ভাবনগুলো আরো উন্নত করার কাজে লেগে যান।”- স্টিভ জবস

 

স্টিভ জবস ১৭ বছর বয়স থেকে কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য একটা কলজে খুঁজতে ছিলো, যাতে তার বাবা – মা ও কলজে পড়াশোনা খরচ জোগান দিতে পারে। স্টিভ জবস স্ট্যানফোর্ডের মতো একটা কলেজ চয়েস করেন, সেই কলেজের নাম ছিলো রিড (Reed) কলেজ।

এই কলেজ অনেক ব্যয়বহুল ছিলো।স্টিভ জবস রিড কলেজে ৬ মাস পড়াশোনা করেছিলো কারণ, এই কলেজের টিউশনি খরচ, কলেজের খরচ জোগাড় করতে তার, পিতা মাতার সারা জীবনের সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে মাত্র ৬ মাসে। তার মা বাবার সারা জীবনের সঞ্চয় শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই, স্টিভ জবস সিন্ধান্ত নেন কলেজ থেকে ড্রপ আউট করবেন।

তাই ৬ মাস পরে কলেজ থেকে ড্রপ আউট হয়ে যায় স্টিভ জবস।

স্টিভ জবসের সিদ্ধান্ত কি ঠিক ছিলো?

যখন মানুষ সফলতা অর্জন করে নেই,তখন তার সব সিদ্ধান্ত সঠিক। যখন সে অসফল হয় তখন সবাই তাকে আন-সাকসেস বলে। তার কোন সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো না। স্টিভ জবস যখন কলেজ ড্রপ আউট করেন এবং সফলতা পাই তখন স্টিভ জবস সাকসেস।

স্টিভ জবস, পরিবারের কষ্ট এর কথা চিন্তা করে ড্রপ আউট হওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন।স্টিভ জবস ড্রপ আউট হওয়ার পরে ১৮ মাস বেকার ছিলো, সে জানতো না কি করবে, তার লাইফে কি করতে হবে, কিছুই জানতো না।

স্টিভ জবস তার একটা বক্তব্য দেওয়ার সময়, এটা নিশ্চিত করেছেন যে। আমি যখন ড্রপ আউট হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম, আমার মনের মধ্যে বিশ্বাস ছিলো, আমি ড্রপ আউট হওয়ার জন্য যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এটা ঠিক ছিলো। আমার মা বাবার সঞ্চয় বেঁচে যাবে। আমার মা বাবার কষ্ট কম হওয়ার জন্য আমি সিদ্ধান্ত নিলাম। পিছনে তাকিয়ে কি লাভ হবে, আমার যা করতে হবে সামনা সামনি করতে হবে।

প্রত্যেক মানুষের জীবনে, ঝড় আসে বাঁধা ও আসে। এই প্রতিকূল থেকে আমার বাহির হতে হবে, এটাই জীবন, এটাই মানুষের সংগ্রাম। কলেজ ড্রপ আউট হওয়া অনেক কষ্টের, য কলেজ ড্রপ আউট হয়েছে, সেই জানে, ড্রপ আউট হওয়ার কষ্ট কেমন।

আমার কাছে কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি অসাধারণ টুল যা আমরাই তৈরি করেছি। এটা মনের বাইসেকেলের সমতূল্য বললেও ভুল হবে না- স্টিভ জবস

 

আপনার মনে যদি ড্রপ আউট হওয়ার চিন্তা আসে, অবশ্যই একটু ভেবে নিবেন, স্টিভ জবস ও ভেবে ছিলো। তার পরিবার কে সাপোর্ট করার জন্য সে ড্রপ আউট হয়েছিলো। অনেক বিশ্লেষণ মনে করেন, স্টিভ জবসের ওই সিদ্ধান্ত ছিলো, বিলিয়ন ডলার সিদ্ধান্ত। স্টিভ জবস ও মনে করতেন এটা ছিলো তার জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত।

 

ড্রপ আউট হওয়ার পর স্টিভ জিবসে জীবন কেমন ছিলো?

সত্যি বলতে, ড্রপ আউট হওয়ার পরে, ১৮ মাস বেকার ছিলো। কোন মানুষ ১৮ মাস বেকার থাকলে কি হয় একজন বেকারই ভালো জানেন। স্টিভ জবস মনে করতেন, আমি ড্রপ আউট হওয়ার মূহুর্তেই আমি প্রয়োজনীয় ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দিতে পারি, যে ক্লাস গুলো আমার আগ্রহের নয়।

কলেজ ড্রপ আউট হওয়ার পর, স্টিভ জবস, হল রুম ও ছেড়ে দিতে হয়েছে। স্টিভ জবস তার বন্ধুর সাথে রুমের মেঝেতে শুয়ে ছিলো কারণ তার থাকার জন্য কোন রুম ছিলো না।

কখনো কখনো জীবন আপনার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করবে। তখন বিশ্বাস হারাবেন না।”– স্টিভ জবস

এক সময়, $৫ সেন্ট ডলারে জন্য তাঁর, ক্রয় করা কোকের বোতল ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল। ট্রাবল মানুষ কে শিখতে চেষ্টা করে।এই চিন্তা থেকে স্টিভ জবস প্রতি শহরে হাঁটত, কারণ তার কাছে টাকা ছিলো না।

মাঝেমধ্যে রবিবার রাতে সে হরি কৃষ্ণ মন্দিরে যেতো, কারণ ওই রাতে ভালো খাবার পেতো তাই ওই মন্দিরে যেতো।

এই মন্দিরটি ছিলো স্টিভ জবসের প্রিয় জায়গা। এই মন্দির টি ছিলো স্টিভ জবসের রোড ম্যাপ এর মতো। স্টিভ জবস মাটিতে পরতেছে, ওঠেছে এখান থেকে শিখেছে স্টিভ জবস, এই মাটিতে হোঁচট খেয়েছে বলে তো অমূল্য সম্পদ জীবনের মর্ম বুঝেছে।

নতুন কিছু শেখার নেশা ছিল স্টিভ জবসের?

 

একদিন ড্রপ আউট,হওয়ার পর তার কলেজে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো, সে তার কলেজের বিভিন্ন দেওয়ালে পোস্টার দেখতে ফেলো পোস্টারে ছিলো, বিভিন্ন ধরনের  ক্যালিগ্রাফি দিয়ে পোস্টার সাজানো, এই পোস্টার গুলো দেখে তার মনে হলো আমিও ক্যালিগ্রাফি শিখবো।

প্রতিটি ড্রয়ারে প্রতিটি লেবেলে, সুন্দর ভাবে হাতের ক্যালিগ্রাফ করা ছিলো। এই ক্যালিগ্রাফ দেখে  স্টিভ জবস এর শিখতে মন চাইলো, এটা কি ভাবে করে, কি করলে এটা আরও ভালো হবে।

ক্যালিগ্রাফি কি?

 

ক্যালিগ্রাফি হলো, বিভিন্ন অক্ষরের সংমিশ্রণে মধ্যে স্থান, যা টাইপোগ্রাফিক কে দুদর্ন্ত করে তোলে। কোন পোস্টারে বা ডিজাইনে বিভিন্ন ফন্ট দেখি আমরা সাজানো। দেখলে মনে হবে হ্যান্ড রাইটিং খুব সুন্দর ক্যালিগ্রাফ দেখলে মন জুড়ে যাবে। ক্যালিগ্রাফি কি করে করতে হয়, তার জন্য একটা ক্লাস নেওয়া সিদ্ধান্ত নেন স্টিভ জবস।প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটা ক্লাস করবেন ক্যালিগ্রাফির।

ক্যালিগ্রাফি
ক্যালিগ্রাফ

সেরিফ এবং সেন-সেরিফ টাইপফেস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ছিলো। ফান ফেক্ট, স্টিভ জবস জানতো না, কেন সে ক্যালিগ্রাফি শিখতে ছিলো, এই ক্যালিগ্রাফি নিয়ে সে কি করবে তার ধারণা ও ছিলো না। ক্যালিগ্রাফি তার বাস্তব জীবনে প্রয়োগের কোন আশাও ছিলো না।

কিন্তু ১০ বছর পরে যখন স্টিভ জবস ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার ডিজাইন করে ছিলেন তখন প্রথম ক্যালিগ্রাফি ব্যাবহার করেছিলো। মজার ব্যাপার হলো ক্যালিগ্রাফি একটি ক্লাস ও ড্রপ দেন নি। ম্যাকের একাধিক টাইপফেস ছিলো।

উইন্ডোজ” ম্যাক কে কপি করে ছিলো। আজকের পোস্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি, কেন স্টিভ জবস ড্রপ আউট করে ছিলো।  ভালো লাগলে শেয়ার করবেন। আপনার কি মতা মত স্টিভ জবস  ড্রপ আউট হয়ে কি ভালো করে ছিলো, আমাদের সাথে কমেন্টে করে জানাতে পারেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *